সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ কে আবারও নতুন করে এ দেশের তরুণ ছাত্রসমাজের তাজা রক্তের বিনিময়ে শিক্ষা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, অর্থ, বাণিজ্য, ধর্ম বর্ণ, সবকিছুকে স্বাধীন করা হয়েছে। যারা মুল্যবান প্রাণ বিলিয়েছে সেই আবু সাইদ, মুগ্ধ, সহ সবার জীবনের ভুলের মার্জনা এবং উচ্চ মর্যাদা কামনা করছি।
প্রায় একটি মাস এদেশের আগামীর প্রদীপ্ত রবি ছাত্রসমাজের বৈষম্য বিরোধী যুক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে প্রাথমিক সংগ্রাম শুরু হলেও দিন গড়িয়ে এ সংগ্রাম রুপ নেয় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে। রাতের অন্ধকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন কলেজ ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের গণহত্যার মাধ্যমে বহু লোকদের হত্যা করা হয়েছে। বিনাদোষে কারাবন্দী করেছে অনেক শিক্ষকদের ও। এ আন্দোলনে সাধারণ জনগণ, সাংবাদিক, পুলিশ, পেশাজীবি সহ অনেকে মার খেয়েছে। জীবন হারিয়েছে ছাত্রী, শিশুরাও। অবশেষে গনঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে এদেশের তরুণ যুবক ছাত্রসমাজ, সুশীল সমাজ, আলেমসমাজ সহ সকলে একযুগে মাঠে নেমে পতন ঘটিয়েছে ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসকের। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন হলেও পরে সেটা তার সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনতার সময়ের সদ্ব্যবহার। এখন সবাই নতুন একাত্তরের স্বাদ উপভোগ করেন। উদ্যোগ গ্রহণ করেন পুরো দেশ কে ঢেলে সাজাতে। এই দ্বিতীয় স্বাধীন পরবর্তী সময়ে স্বদেশ প্রেমী নাগরিক হিসেবে দেশকে সাজাতে হবে আমাদের। ধর্ম, বর্ণ, গোত্রপ্রীতির উর্ধ্বে উঠে প্রকৃত স্বাধীন বাংলায় রুপ দিতে হবে। সিংহভাগ মুসলিম হয়ে সংখ্যালঘুদের উপর দলীয়, গোত্রীয়, ব্যাক্তিক কিংবা রাষ্ট্রীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত করে, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কোনো প্রকার নির্যাতন করা যাবে না। এটা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। এরা ও এদেশের নাগরিক। আবার ক্ষমতাচ্যুত শাসকগোষ্ঠী অসহায় ভেবে তাদের ও কোনো হেনস্তা করা যাবে না। যদি তারা আগের মতো শোষণের পথে থাকে তবে আইনের সহায়তায় তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। রাসুলের সাঃ মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে ভাষনের মূল ছিল অপরাধীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা।
মনে রাখা দরকার,
“স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন”
ইতিহাসের মুহাম্মদ বিন কাশিম যখন হিন্দুস্তানের রাজা দাহিরের আমলে একের পর এক এলাকা বিজয় করতে লাগলেন তখন উপজাতির মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়লো মুসলমানরা স্বৈরাচার, তারা হিন্দুদের উপর চরম অত্যাচার করে, রমনীদের দর্শন করে তাদের হাতে সবাই অনিরাপদ । এ ভুল ভাঙ্গার জন্য বিন কাশিম শুধু হিন্দু বোদ্ধদের অভয় দেন নাই বরং তাদের জান মাল, ঘরবাড়ি, উপাসনালয় পাহারা দেয়ার জন্য লোক নির্ধারণ করে দিলেন। এবং বললেন কোনো মুসলমান তোমাদের জানমালের উপর হাত দিলে, তোমাদের যুবতীদের প্রতি হাত বাড়ালে তার কল্লা আলাদা করে দেওয়া হবে। বৌদ্ধরা ইতোপূর্বে মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকলেও মুসলমানদের কঠোর নিরাপত্তা , নিপুণ চরিত্র দেখে হিন্দু বৌদ্ধ সবাই বিমুগ্ধ। এমনকি বিজিত এলাকায় মুসলিম বাহিনীর তৎপরতা দেখে একের পর এক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে লাগলো।
দেশের সম্পদ ভূলন্ঠিত হতে না দেওয়া। দেশ আমাদের মানে দেশের সম্পদ ও আমাদের। কাজেই কোনোভাবে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় দেশের সম্পদ বিনষ্ট করা যাবে না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান করা।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা এ কাজে লেগে পড়েছে। অবস্থাদৃষ্ট এমন, পূর্বে সরকারিভাবে নির্দিষ্ট দিন পরিচ্ছন্ন দিবস ঘোষণা করে ও এত পরিষ্কার দেখা যায়নি। স্বতঃস্ফূর্ত অভিযানে ৬৮ হাজার গ্রাম আজ যেভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সেজেছে, ৫২ বছরে এভাবে কখনো হয়নি।
হাদিসে আছে, সালিহ ইবনু হাসসান রহ. থেকে বর্ণিত ; আমি সাঈদ ইবনুল মুসাঈয়্যাব(রহ:)-কে বলতে শুনেছি, অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা পবিত্র এবং পবিত্রতা ভালোবাসেন। তিনি পরিচ্ছন্ন এবং পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। তিনি মহান ও দয়ালু, মহত্ব ও দয়া ভালোবাসেন। তিনি দানশীল, দানশীলতাকে ভালোবাসেন। সুতরাং তোমরাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থেকো। আমার মনে হয় তিনি বলেছেনঃ তোমাদের আশেপাশের পরিবেশকেও পরিচ্ছন্ন রাখো এবং ইয়াহুদীদের অনুকরণ করো না। সালিহ বলেন, আমি এ প্রসঙ্গে মুহাজির ইবনু মিসমারের নিকটে বর্ণনা করলাম। তিনি বলেন, আমির ইবনু সা’দ তার পিতার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে একই রকম হাদীস আমার কাছে বলেছেন, তোমাদের আশেপাশের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখ। (তিরমিজি শরীফ)
উক্ত হাদিস থেকে পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি দানশীলতার গুরুত্ব ও বুঝা যায়। আমরা সাধ্যানুরূপ নিহত ছাত্রদের স্বজনদের কিছু সহযোগিতা করতে পারি। পরস্পর সম্প্রীতি ভালবাসা তৈরি করা, সবার জন্য ক্ষমতা নয় সমতা বিধান করা। প্রত্যেকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান, আঙ্গিনা নিজ দায়িত্বে পরিপাটি রাখতে হবে। দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি অহিংস আচরণ ভালবাসা জাগাতে হবে হৃদয় থেকে।
জন্মভূমির প্রতি প্রেম নিয়ে হাদিস শরীফে এসেছে- আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত ; তিনি বলেন, একবার রসুল সাঃ মাক্কাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, কি উত্তম শহর তুমি! তুমি আমার কত পছন্দনীয়! যদি আমার জাতি আমাকে তোমার থেকে বিতাড়িত না করতো, তবে আমি কক্ষনো তোমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও বাস করতাম না। ( মিশকাত শরীফ)
৫৬হাজার বর্গমাইল জাগ্রত হোক মেধা-মনন, সুশীল সভ্যতার ভিত্তিতে। চির অজেয় অম্লান হোক বিশ্বময় আমার সোনার বাংলা।
লেখক : মোঃ ইউনুস আহমেদ