কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানে টিকাদান কর্মীদের জন্য সম্মানী বাবদ ২৪ লাখ টাকা জমা হয় সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসের হিসাব নম্বরে। ২০২৩ সালের ৪ জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার ধাপে এসব অর্থ জমা হয়। টাকা জমা হওয়ার পর একাউন্ট থেকে দুই ধাপে সব টাকা তোলা হয়েছে, কিন্তু বছর পার হলেও সম্মানীর টাকা পাননি মাঠ পর্যায়ের টিকাদান কর্মীরা।
টিকাদান কর্মীদের অভিযোগ, সম্মানীর এসব অর্থ সরকারি হিসাব নম্বর থেকে তুলে নেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। কিন্তু কোন অর্থ বণ্টন করা হয়নি কর্মীদের মাঝে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন গোপন রাখা হয় টাকার বিষয়টি। বরং ভুয়া স্বাক্ষরে অর্থ বণ্টনের তালিকা তৈরি করে তা পাস করা হয়।
স্বাস্থ্য কর্মীদের অভিযোগ-সম্মানীর এসব অর্থ লোপাটের জন্য এমন ফন্দি এঁটেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। যদিও অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী স্বাস্থ্য সহকারীবৃন্দ।
জানা গেছে, ২০২২ সালে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের কোভিড টিকাদান এবং একই বছরে ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকার বুস্টার ডোজের টিকা প্রদানের জন্য চার ধাপে ২৪ লাখ টাকা সম্মানী আসে স›দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সরকারি হিসাব নম্বরে। এরমধ্যে ২০২৩ সালের ৪ জুন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস থেকে ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৮১২ টাকা, ২৭ আগস্ট ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৮৫ টাকা, ১২ অক্টোবর ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৮৫ টাকা এবং ২৩ নভেম্বর ২ লাখ ৮১ হাজার ২৮৫ টাকাসহ সর্বমোট ২৪ লাখ ৭৪৭ টাকা জমা হয়।
এরমধ্যে চেকের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২৬ জুন ১৪ লাখ টাকা এবং ২৮ ডিসেম্বর ১০ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ২৪ লাখ টাকা নগদে উত্তোলন করা হয়। যা সন্দ্বীপ উপজেলার ৪৫ ওয়ার্ডে নিয়োজিত স্বাস্থ্য সহকারীদের বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু এক টাকাও বিতরণ করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মীরা জানান, সিভিল সার্জন অফিস থেকে একাউন্টে টাকা আসলেও এ বিষয়ে কাউকে কিছুই জানাননি ইউএইচএফপিও। নিয়ম ভঙ্গ করে তিনি নিজেই সব টাকা একসঙ্গে তুলে নেন। যখন বিষয়টি জানাজানি হয়, তখন টাকার জন্য কর্মীরা ইউএইচএফটিও’র সঙ্গে দেখা করলে তিনি এ বিষয়ে গড়িমসি করেন। একাধিকবার ওনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ টাকা তিনি দিতে চাননি।
এসব অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মানস চৌধুরী বলেন, ‘এমন কিছুই হয়নি। সবাই টাকা পেয়েছেন। শুধুমাত্র বণ্টনের জটিলতার কারণে দেরি হয়েছে।’
এদিকে, সন্দ্বীপ উপজেলা বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনছুর আলম বলেন, ‘কোভিডকালে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু তাদের প্রাপ্য সম্মানী নিয়ে গড়িমসি করা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য সিভিল সার্জনের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো টাকা স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা পাননি।’
অভিযোগে স্বাস্থ্য সহকারীরা উল্লেখ করেন, ভুয়া টিকাদানকারীর স্বাক্ষরে ১ বছরেরও বেশি সময় আগে বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে। যা থেকে প্রতীয়মান হয় সকলের অগোচরে এসব অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্য ছিল।
অন্যদিকে, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
- পূর্বকোণ/এসএ